সার্ফিং এর স্বর্গরাজ্য ইরিসেরা (ভিডিও)
প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ
ইরিসেরা। পর্তুগালের পশ্চিম তীরে অবস্থিত সমুদ্র তীরবর্তী একটি রিসোর্ট এবং তৃতীয় পর্যায়ের প্রশাসনিক উপ-বিভাগ। সার্ফিং এর স্বর্গরাজ্য এই রিসোর্টটি পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের ৩৫ কি.মি. উওর-পশ্চিমে মাফরা লোকালয়ে অবস্থিত। ১২.০৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত এই রিসোর্টের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১০ হাজারের মতো। নীল সাগর আর সোনালী সৈকতের সমন্বয়ে এক অপূর্ব সুন্দর দর্শনীয় স্থান এই ইরিসেরা দশকের পর দশক ধরে পর্যটকদের মনোরঞ্জন করে চলেছে।
অনেকের মতে ইরিসেরা হচ্ছে ইউরোপের সার্ফিং এর মক্কা। সার্ফিং এর উপযোগী বিশেষ উপকূলীয় অবস্থা থাকার কারণে একে এই নামে অভিহিত করা হয়। ইরিসেরার ওয়ার্ল্ড সার্ফিং রিসার্ভের হেডকোয়ার্টার এটি। বিংশ শতকের ৪০ ও ৫০ এর দশকে এই স্থানটি লিসবনের অনেক পরিবারের জন্য গ্রীষ্মকালীন অবকাশের একটি জনপ্রিয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হত। ৪০টি সৈকত সমৃদ্ধ এই স্থানটি বর্তমানে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পর্যটকদের বেড়ানোর জন্য আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশ্বের সব জায়গার সার্ফাররাও এই স্থানটিতে আগ্রহ নিয়ে ভ্রমণ করতে আসে।
“ওরিসেরা” থেকে ইরিসেরা নামটির উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। ওরিসেরার উৎপত্তি আবার ওরিসো থেকে যা মূলত একটি সামুদ্রিক শৈবালের নাম। একটি কিংবদন্তির মতে, ইরিসেরা একসময় ছিল “টেরা ডি ওরিসোস” অর্থ্যাৎ সামুদ্রিক শৈবালের ভূমি। তবে মিসেরোকর্ডিয়া জাদুঘরে সংরক্ষিত সাম্প্রতিক অনুসন্ধান বলছে, আসলে এটি ওরিসো নাম থেকে আসেনি, বরং ফিনিশীয় দেবী আস্তার্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত এক ধরণের প্রাণি ওরিসো কেক্সেইরো থেকে এসেছে। এতে অনেকে ধারণা করেন এই অঞ্চলের এক সময় ফিনিশীয় উপনিবেশ ছিল।
ইরিসেরা সব সময় অভিজাতদের প্রিয় অবকশ স্থান ছিল। ১৮০৩ সালে কইম্ব্রার বিশপ এখানে নিয়মিত গোসল করতেন এবং ১৮৬৪ সালে সেভয়ের রানী মারিয়া পিয়াও এখানে গোসল করতেন।
ইরিসেরা আরেকটি কারণে খুব বিখ্যাত। আর তা হলো পর্তুগালের রাজা দ্বিতীয় ম্যানুয়েলের নির্বাসনের দিনটির জন্য। ২০ বছর বয়সী এই রাজা ১৯১০ সালের ৫ অক্টোবরের বিপ্লবের ফলে প্রেয়া ডোস পেসকাডোর্স থেকে রানী এমেলি অব অরলিন্স এবং মা মারিয়া পিয়ার সঙ্গে নির্বাসনে যান।
ইরিসেরার অর্থনীতি পুরোপুরি সার্ফিং এর উপর নির্ভরশীল। ইরিসেরা নেভাল ক্লাবের উদ্যোগে গঠিত পর্তুগালের প্রথম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় সার্ফিং এসোসিয়েশনের সদর দপ্তর এখানে অবস্থিত। এই এসোসিয়েশনটি প্রটি বছর আঞ্চলিক ও জাতীয় সার্ফিং প্রতিযগিতার আয়োজন করে এবং সার্ফিং এ আগ্রহী দেশী-বিদেশী নাগরিককে সার্ফিং এর শিক্ষা দিয়ে থাকে।
ইরিসেরার সংস্কৃতি সঙ্গীতনির্ভর। এখানকার মানুষ সঙ্গীতের প্রতি অত্যন্ত উৎসাহী। ইরিসেরার সঙ্গীতপ্রেমীরা, যারা বর্তমানে “ফিলারমনিকা কালচারাল ইরিসেরা” নামে পরিচিত, ১৮৪৯ সাল থেকে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে একটি মিউজিক স্কুল পরিচালনার মাধ্যমে গ্রামের সঙ্গীতের ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছে।
ইরিসেরার সৈকত রিবেরা ডিলহাসে এএসপি ওয়ার্ল্ড ট্যুর নামক সার্ফ চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, শহরের ২ কি.মি. উত্তরে অবস্থিত এই সৈকতটি সার্ফিং এর জন্য ইউরোপের সবচেয়ে সেরা সৈকত হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০১১ সালে ডব্লিউএসআর নামক সংগঠন ইরিসেরাকে মালিবু এবং ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্রুজ, অস্ট্রেলিয়ার ম্যানলি বিচ এবং পেরুর হুয়ানচাচোর সঙ্গে পৃথিবীর অন্যতম সেরা ওয়ার্ল্ড সার্ফিং রিজার্ভ হিসেবে নির্বাচন করে। ইরিসেরার স্থানীয় কাউন্সিল স্থানীয় সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে সার্ফিং এর গুরুত্বের কথা স্মরণ করে রিবেরা ডিলহাসে বিচটির পুনরায় উন্নয়ন করেছে।
যদি সামর্থ্য ও সময়-সুযোগের মেলবন্ধন ঘটে তবে ঘুরে আসতে পারেন ইরিসেরা থেকে। আপনি যদি সার্ফিং ভালোবাসেন তাহলে তো কথাই নেই, যদি নাও ভালোবাসেন তবে পর্তুগালের ইরিসেরার সৌন্দর্য আপনাকে অবশ্যই মুগ্ধ করবে।
দেখুন ভিডিও –
প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া